
ফারুক আহমেদ: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল রোড গোল চত্বরে নির্মিত হচ্ছে আর্ন্তজাতিক মানের ইন্টারচেঞ্জ। ৪৮ ভাগ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। কাজ সম্পন্ন হলে কমবে যানজট ও ভোগান্তি। পাল্টে যাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের হাটিকুমরুল রোড গোল চত্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হাটিকুমরুল রোড গোল চত্বর হয়ে যমুনা সেতু পারাপার করে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২০ হাজার যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। ঈদের সময় এই যানবাহন চলাচলের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায় অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে যমুনা সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে হাটিকুমরুল হয়ে উত্তরে চান্দাইকোনা, দক্ষিণে শাহজাদপুর এবং পশ্চিমে নাটোরের বনপাড়া সড়কে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা এই যানজটে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পরেন যাত্রী ও চালকরা। এ সময় যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়। রাতদিন ২৪ ঘন্টা রাস্তায় থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ টাঙ্গাইলের এলাঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি হাটিকুমরুল গোল চত্বরে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন আর্ন্তজাতিক মানের ইন্টারচেঞ্জ। এই ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ কাজ শেষ হলে যানজট থাকবে না। যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের গৌন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন এবং ভোগান্তি কমে যাবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, জনভোগান্তি কমাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ হাটিকুমরুলে নির্মাণ করছে আর্ন্তজাতিক মানের ইন্টারচেঞ্জ। ‘সাসেক-২’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে দেশের মধ্যে সব থেকে নান্দনিক ও দৃষ্টি নন্দন আধুনিক মানের ইন্টারচেঞ্জ। এর নির্মাণ কাজ এবং চালুর পর থেকে তিন বছর ইন্টারচেঞ্জ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে চায়না রেলওয়ে কনক্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লি. (সিআরবিজি)। ২০২২ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় প্রায় দেড়বছর সময় নষ্ট হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে নির্মাণের সময় বাড়ানো হয়। ৭৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইন্টারচেঞ্জের কাজ ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছে নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাণকাজ দ্রুত করা হচ্ছে এবং গুণগতমান ঠিক রেখে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এর নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হবে। জানা যায়, দেশের সড়ক অবকাঠামোর মধ্যে হাটিকুমরুলে নির্মাণ করা ইন্টারচেঞ্জে এই প্রথম ইন্টেলিজেনস ট্রান্টপোর্ট সিষ্টেম (আইটিএস) পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো আইটিএস ব্যবহার করার কারণে যানবাহন চলাচলের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগাম সতর্কতা জানাবে। এতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, যানজট ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনার পাশাপাশি করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা সংকেত জানা যাবে। যানবাহন প্রয়োজন মতো তার গতিপথ বদলাতে পারবে। ফলে দুর্ঘটনা কম হবে।
আধুনিক সকল সুবিধাসম্পন্ন দৃষ্টি নন্দন আর্ন্তজাতিক মানের এই ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণকাজ শেষ হলে এক কিলোমিটার দূর থেকে ভাগ হয়ে যাবে বিভিন্ন জেলার যানবাহন। ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য থাকছে সার্ভিস রোড। থাকবে জনসাধারণ চলাচলের জন্য ফুটওভার ও ওয়াকওয়ে। যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের জন্য থাকবে আধুনিক মানের পৃথক বিশ্রামাগার। নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্বমানের সার্ভিস এরিয়া। যেখানে পাঁচশত যানবাহন একসাথে দাঁড়াতে পারবে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য থাকবে নিরাপত্তা সম্বলিত উন্নত মানের হোটেল-রেঁস্তোরা। এছাড়া ইন্টারচেঞ্জ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক মানের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র। প্রায় ১৪৭ একর বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে এই ইন্টারচেঞ্জ। আর ইন্টারচেঞ্জ এলাকার নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেয়া হচ্ছে। এর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রাচীর। সব মিলিয়ে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে হাটিকুমরুলে। সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান সুমেল বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক নির্মিত ইন্টারচেঞ্জ এই দপ্তরের একটি যুগান্তকারী প্রদক্ষেপ। এর নির্মাণকাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা বদলে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আসবে। সেই সাথে যাত্রী ও চালকদের কোন ভোগান্তি থাকবে না। ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখতে সময় ও অর্থ ব্যয় কমে যাবে। সরকারেরও অর্থ সাশ্রয় হবে। হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, এই ইন্টারচেঞ্জ দেশের অন্যতম বৃহৎ আধুনিক আর্ন্তজাতিক মানের একটি প্রকল্প । যমুনা সেতুর পশ্চিম মহাসড়কের হাটিকুমরুল গোল চত্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই গোল চত্বর ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন উত্তর-দক্ষিণবঙ্গ ও ঢাকার মধ্যে চলাচল করে থাকে। যার কারণে এখানে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন শতশত যাত্রী ও চালকরা।
দুর্ভোগ ও ভোগান্তি কমাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই আধুনিক মানের ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করছে। তিনি আরও জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪৮ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় কাজ শুরু করতে ১৬ মাস দেরি হওয়ায় প্রকল্প সময় বাড়ানো হয়েছে। ইন্টারচেঞ্জ নির্মিত হলে ঢাকার সাথে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘ্ন ও সহজ হবে। পাল্টে যাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। যার কারণে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বণিজ্যে গতি আসবে। তাদের আর্থিক সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। এর আংশিক নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় ঈদকে সামনে রেখে যানজটের ভোগান্তি কমাতে চলতি মাসের শেষের দিকে ইন্টারচেঞ্জের সার্ভিস সড়ক খুলে দেওয়া হবে। এতে করে যানজট সৃষ্টির সম্ভাবনা একে বারেই কমে যাবে। এতে এ বছরের ঈদযাত্রা অনেকটা নির্বিঘ্ন ও স্বস্তির হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।