
ফারুক আহমেদ :
সবজি হিসেবে সজনে জনপ্রিয় ও সুস্বাদু। তবে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। তা কেবল স্বাদের জন্যই নয়। এর নানা ঔষধি গুণের জন্যও। চিকিৎসকরাও এখন নানা রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য সজনে পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কাজেই কারো বাড়ির বাগানে বিনাব্যয়ে ও বিনাশ্রমে যদি সজনে গাছে হাজার হাজার টাকার সজনে উৎপাদিত হয়, তাতে উল্লসিত হবার কথা বৈকি। বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে সজনে অর্থকরী সবজিও হয়ে উঠতে পারে।
সিরাজগঞ্জ জেলা রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা থানার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এবং রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে এখন সজনে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সজনে ডাঁটা। ডাঁটার ভারে নুয়ে পড়ছে ডাল। বিনাব্যয়ে উৎপাদিত এসব সজনে গাছের ডাঁটা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশা করছেন এলাকাবাসী।
শীতের শেষে গরমে রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গাতে এখন মৌসুমী ও সুস্বাদু সবজি সজনে খাওয়ার ধুম। জেলার প্রতিটি বাড়িতেই এখন মাছ, চালকুমড়ার বড়ি, আলুর সাথে সজনে ডাঁটা রান্না হচ্ছে। বাজারের থলেতে সজনে ডাঁটা সবার হাতে হাতে। কেউ আবার নিয়ে যাচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। বহুগুণে গুণান্বিত সজনে ডাঁটার গাছ এখন মেহেরপুর জেলার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায়। বাজার দাম এবং চাহিদার কারণে অনেকে এখন সজনে চাষ করছেন। সবজি হিসেবে অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনে চাষ অনেক লাভজনক। বাড়ির আনাচে-কানাচে বা পতিত জমিতে এই গাছ লাগিয়ে চাষ করা যায়।
ফুল থেকে লকলকে কচি ডাঁটা যখন বাজারে ওঠে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবে যখন পরিপূর্ণ বাজারে আসে তখন দাম কমে যায়। বর্তমানে বাজারে ৮০ – ৫০ টাকা কেজি দরে সজনে ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে। এবার প্রাকৃতিক ঝড়-ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি গাছে ফলন এসেছে প্রচুর। সজনে উৎপাদনে চাষিদের কোনো খরচ হয় না। ফলে গাছ থেকে যতটুকু সজনে ডাঁটা উৎপাদিত হয়, তার সবটুকুই চাষির লাভ।
তবে জেলায় অথবা উপজেলায় কত হেক্টর জমিতে সজনের গাছ আছে তার সঠিক হিসেব কৃষি বিভাগের নেই।
সিরাজগঞ্জ জেলা রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা থানার ১নং রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের উনুখা গ্রামের সজনে চাষি রফিকুল বিশ্বাস জানান, বাণিজ্যিকভাবে মাঠে কোনো জমিতে সজনে চাষ করেন না। তার বাড়ির চারপাশে ১০টি সজনে গাছ লাগিয়েছেন। এই গাছগুলি লাগাতে কোনো খরচ হয়নি তার। তিনি এই মৌসুমে ১০০০ – ১৫০০০ হাজার টাকার সজনে ডাঁটা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।
রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা থানার ৩নং ধুবিল ইউনিয়নের আমশড়া গ্রামের গৃহস্থ চায়ের দোকানদার আব্দুল আজিজ বলেন, এখন সজনে গাছে থোকায় থোকায় ডাঁটা ধরেছে। কোনো কোনো গাছে পাতা না থাকলেও গাছ ডাঁটায় পরিপূর্ণ। নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণেই বাড়ির পাশে ২টি গাছ লাগিয়েছিলাম। তবে যে পরিমাণে সজনে ডাঁটা ধরেছে তা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ৩ – ৪ হাজার টাকার ডাঁটা বিক্রি করতে পারবো।
তিনি আরও জানান, সজনে চাষে কোনো খরচ হয় না। গাছের ডাল লাগালেই হয়। ডাল লাগানোর পর কয়েকদিন গোড়ায় পানি দিলেই মাটিতে গাছের শেকড় গজায়। তবে সজনের প্রধান শত্রু হচ্ছে ঝড়। ঝড়ে যদি ডাল ভেঙে যায় এমনকি গাছ উপড়ে পড়ে তাহলেই এর ক্ষতি হয়। রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রৌউফ এই প্রতিনিধি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজনের সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় সজনে গাছ আছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজনে ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।