
সৈয়দ জাহিদুজ্জামান:
শীত বিদায় নিয়ে বসন্তের মাঝামাঝি সময়। এরই মধ্যে দিঘলিয়ায় আম গাছসহ আমের বাগানগুলোতে আমের মুকুলে ছোট ছোট গুটির দেখা মিলছে। তবে আমগাছে মুকুল গজিয়েছে কম তবে গত বছরের তুলনায় অনেক ভলো। ফলনও ভাল দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আম চাষিরা।
এদিকে বাড়িতে বাড়িতে ও এলাকার আম বাগানগুলোতে মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ সবাইকে জানান দিচ্ছে মধু মাসের আগমন বার্তা। ইতোমধ্যে আম বাগান চাষিরা তাদের গাছে মুকুল ধারণের জন্য ভিটামিন হরমনসহ বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আম বাগান চাষিদের কাছে এই সময়টা সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ এই সময়টা তাদের আম বাগান কেন্দ্রিক স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মৌসুম। এই সময়টার আগমন মানেই তাদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া তথা স্বাবলম্বী হওয়া। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন আমবাগান ও বসতবাড়িতে যাদের আমের গাছ রয়েছে তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই এই ব্যস্ততার চিত্রই চোখে পড়ে।
দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামের আম চাষি এ্যাড. শাহাদমত হোসেন জানান, আমার ১০ একর জমিতে হাড়িভাঙ্গা, আম্রুপালী, হিমসাগরসহ নানা জাতের আম বাগান রয়েছে। আমের গাছে গাছে এরই মধ্যে মুকুল এসেছে। কোনো কোনো গাছে ইতোমধ্যে আমের গুটি দেখা দিয়েছে। এ বছর মুকুলের ভাগ কম হলেও গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। কারণ এবারও কিছু কিছু গাছে একেবারই মুকুল আসেনি। তবে এই সময়টি আমাদের জন্য খুবই গুরুরত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ে গাছের পরিচর্যার উপরই নির্ভর করবে গাছে ফলন আসা ও ফল দাঁড়ানোর ব্যাপারটা। এই সময়টাতে বাগানের নিবিড় পরিচর্যা জরুরি।
তিনি জানান, আমার এই আম চাষ দীর্ঘদিন পর্যন্ত চলে আসছে। আমি আম চাষে একজন সফল চাষি। আমি ও আমার পরিবার প্রতিবছর ১০ লাখ টাকার আম বিক্রি করে থাকি। আমি ভালো আম চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য স্বর্ণপদকও পেয়েছি। কিন্তু এবার আমের বাম্পার ফলন না হলেও একেবারে খারাপ হবে না। আমের ফলনের ক্ষেত্রে এবারের আবহাওয়া খারাপ হয়নি। গত বছরে শেষ দিকে বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমের মুকুল গঁজানো ব্যাহত হয়েছিল। তবে চলতি বছর এসময় আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে আমের মুকুল ও গুটি আসা ব্যাহত হয়নি। এ আশা নিয়েই বাগানের পরিচর্যা করে চলেছি।
এ উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের আম বাগান ও সবুজ নার্সারীর মালিক খায়রুল আলম সবুজ জানান, তার পিতা মৃত মোঃ শওকাত হোসেন একজন সফল নার্সারী মালিক ও আম চাষি ছিলেন। তিনি তার পিতার কর্মকান্ডকে ধরে রেখে সামনে অগ্রসর হচ্ছেন। সে তার পিতার ব্যবসার পাশাপাশি তার নার্সারীর অগ্রভাগে কপি হাউজ করেছেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন খাবারও তৈরি করেন। ভেতরে বিনোদন মূলক ব্যবস্থাও আছে। প্রতিদিন অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে তার এ কপি হাউজে। ১২ বিঘা জমিতে রয়েছে আমার আমের বাগান। ছোট বড় এ সকল আম বাগানের আম গাছে মুকুল এসেছে। মুকুল রক্ষায় এই সময়টাতে ব্যাপক পরিচর্যা করতে হচ্ছে। তা না হলে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বাগানে কৃষি শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এবার পরিবেশ ভালো থাকার কারণে দুই একটা গাছ ছাড়া অধিকাংশ গাছে আমের মুকুল ও গুটি এসেছে। এ বছর আমের ফলন খুব ভলো হবে।
দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কিশোর আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, দিঘলিয়ায় ছোট বড় অনেক গুলো আম বাগান আছে। আম চাষের কারণে দিঘলিয়ার দেশ বিদেশে সুনাম রয়েছে। ইতোমধ্যে কেউ কেউ পদকও পেয়েছেন। এ উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে আম গাছে মুকুল ও ছোট ছোট গুটি এসেছে। কিছুদিনের মধ্যে বাকী গাছেও আমের গুটি দেখা যাবে।
তিনি এ প্রতিবেদককে আরো জানান, বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আবহাওয়া খারাপ না হলে দিঘলিয়ার আম চাষিরা উৎপাদিত আম দিঘলিয়া মানুষের চাহিদা পূরণ করে দেশ বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে।