
ঢাকা প্রতিনিধি:
সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া আগামী জুনের মধ্যে দেশের সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব বলে জানিয়েছে তারা। গতকাল শনিবার কমিশনের প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্টে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশে কার্যত কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নেই।
এই মুহূর্তে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব। আগামী জুনের মধ্যে সব সমতল ও পাহাড়ের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।
সুপারিশে বলা হয়, বর্তমানে নতুন একটি স্বচ্ছ ক্যানভাসে নতুন ছবি আঁকা সম্ভব। নতুবা নির্বাচনের আগে অনেক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনি জটিলতার উদ্ভব হতে পারে।
স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সংসদীয় পদ্ধতি চালু করার আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে জনপরিসরে থাকলেও কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। এখন সে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি একীভূত স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে এই সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে কাজ করেছেন সাতজন সদস্য।
সংস্কারের সুপারিশে বলা হয়, একই তফসিলে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন অংশগ্রহণ করবে। প্রতিজন ভোটার নিজ নিজ ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটির ওয়ার্ডের জন্য একটি ব্যালট পেপার, উপজেলার জন্য একটি এবং জেলার জন্য একটি ব্যালট পেপার পাবেন।
সুপারিশে বলা হয়, ১৯৭২ সালের পর পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য পারস্পরিক সম্পর্কবিহীন যে পাঁচটি পৃথক আইন ও অসংখ্য বিধিমালা বিভিন্ন সময় জারি করা হয়েছে, সেসব আইন ও বিধিমালা বাতিল করে সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দুটি একীভূত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
গ্রাম ও নগরের সর্বত্র সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো হবে সমরূপ। স্থানীয় সরকারের ‘স্থানীয় সরকার সার্ভিস’ নামে একটি নিজস্ব সার্ভিস কাঠামো থাকবে। কর্মচারীদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত অভিগম্যতা থাকলে পদোন্নতি ও পদায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে৷ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত সব প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম এই অধিদপ্তরের আওতাধীন হবে।
আগামী ১০ বছরের মধ্যে স্থানীয় সরকারের স্তরসংখ্যা হ্রাস করে গ্রাম-শহরের পার্থক্য কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। বর্তমানে বিদ্যমান পাঁচটি পৃথক আইনের স্থলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুটি মৌলিক আইনের অধীনে আনা যেতে পারে।
জাতীয় সংসদের মতো সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামো দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত থাকবে— (১) বিধানিক অংশ ও (২) নির্বাহী অংশ। বিধানিক অংশের প্রধান হবেন ‘সভাধ্যক্ষ’ এবং নির্বাহী অংশের প্রধান হবেন ‘চেয়ারম্যান’ বা ‘মেয়র’।
সভাধ্যক্ষ জাতীয় সংসদের স্পিকারের অনুরূপ দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শক্রমে পরিষদের সভা-অধিবেশন আহ্বান করবেন।
পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট সাংবিধানিক মর্যাদাসম্পন্ন একটি স্থায়ী ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, প্রতিটি উপজেলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন সিনিয়র সহকারী জজ এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির পূর্ণাঙ্গ কার্যালয় স্থাপন করা। ইউনিয়ন পরিষদের অধীন গ্রাম আদালত বিলুপ্ত করে ওয়ার্ড পর্যায়ে সালিসি ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে।