
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সীমান্ত এলাকায় নতুন করে প্রায় ১০০টি স্থানে বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। গতকাল শনিবার ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়। পাশাপাশি, চলমান সীমান্তে বেড়া নির্মাণের কাজ অব্যাহত থাকবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো স্থায়ী স্থাপনা ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ক্ষেত্রে উভয় দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পরিদর্শক দলের পরিদর্শন ও যৌথ আলোচনার ভিত্তিতে নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সীমান্তে নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষায় আলোচনা
আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফ মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া, সীমান্তবর্তী নদীর ভাঙন রোধে তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ এবং পূর্বাভাস না দিয়ে বাংলাদেশের উজানে বাঁধ খুলে দিয়ে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যা ঠেকানোর বিষয়ে বিএসএফকে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করার অনুরোধ জানানো হয়।
বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র পাচার, স্বর্ণসহ অন্যান্য চোরাচালান, অনুপ্রবেশ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ কার্যকর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিজিবি মহাপরিচালক।
সীমান্ত হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ
বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের চার দিনব্যাপী (১৭-২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। অন্যদিকে, বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।
মানবপাচার ও অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে পদক্ষেপ
উভয় পক্ষ আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের ফলে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে নজরদারি বৃদ্ধি এবং সীমান্তবর্তী জনগণের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় একমত হয়েছে।
এছাড়া, মানবপাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এই অমানবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছে উভয় দেশ। মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধারে এবং পুনর্বাসনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
সীমান্ত শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি
বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে মানবাধিকার ও শান্তি রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বিএসএফ সীমান্ত হত্যা কমানোর লক্ষ্যে ‘অ-প্রাণঘাতী’ নীতি অনুসরণ করবে। একইসঙ্গে, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো হবে।
সম্মেলনের শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, সীমান্তে সংঘটিত যেকোনো হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে উভয় দেশ।