
বিপ্লব হোসেন:
গোপালপুর উপজেলা কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে বার্ষিক আলোচনা সভা, বনভোজন ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। (শনিবার) ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সকাল ৯টা থেকে ধামরাই থানার মহিষাসী এলাকায় মোহাম্মদিয়া গার্ডেনে এ বনভোজন ও মিলনমেলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঢাকা জেলা যুবদল নেতা প্রকৌশলী মোঃ আতিকুর রহমান উজ্জ্বল এর সার্বিক সহযোগিতায়, মোহাম্মদিয়া পার্কে এক জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বার্ষিক আলোচনা সভা, বনভোজন ও মিলনমেলা।
চমৎকার আবহাওয়ায় দারুণভাবে জমে উঠেছিল এ মিলনমেলা। বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের উপস্থিতিতে আড্ডা, খেলাধুলাসহ নানাবিধ আয়োজনে মেতে ছিলেন সবাই।
কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক, মন্টু মিয়ার সঞ্চালনায় ও ডাক্তার মোঃ রফিকুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর নির্বাহী কমিটির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী জনাব এডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বহু কথা আমার মনের মধ্যে জমা আছে, কিন্তু সেগুলো বলতে চাই না। পরম করুনাময় মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, একটি মিথ্যা মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছিল। দীর্ঘদিন পরে হলেও সেখান থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে মুক্ত করেছেন এবং আপনাদের সামনে দু’চারটি কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। সেজন্য আমরা সবাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি, সবাই বলুন আলহামদুলিল্লাহ।
লোমহর্ষক তার জেল জীবন বৃত্তান্তের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে ভেজা কণ্ঠে বলেন, জেলে থেকেও হয়তো ভালো ছিলাম! কারণ, আমার বন্ধু ইলিয়াস আলীর লাশ এখনো পাওয়া যায়নি। তার সন্তানরা হাহাকার করে কান্না করছে, পরিবারের সবাই শুধু তার সন্তান বাবাকে ফিরে পাবে এবং পরিবারের লোকজন তাকে ফেরত পাবে এই আশায়। আমার অবস্থাও হয়তো এমন হতো, মহান আল্লাহ তায়াল জেলে প্রেরণ করে হয়তো আমাকে রক্ষা করেছেন। আমার একটি আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমি কোন অন্যায় করি নাই, সুতরাং মহান আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আমাকে এই জালিমের কারাগার থেকে একদিন মুক্ত করবেন। ২৪ সালে নির্বাচনের পর আমি সহ আমার পরিবারের লোকজন বা আপনারা যারা আছেন, কেউই হয়তো মনে করেননি যে আমি আবার মুক্ত হয়ে ফিরে আসতে পারবো।
তিনি আরো বলেন, আমি শুধু একটি কথা বলতে চাই। আমি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি করি, আমরা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি সবাই একই স্টলে খাওয়া-দাওয়া করেছি, আন্দোলন করেছি, মাঠে বক্তৃতা শেষে আবার একই স্টলে বসেছি, আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিল না। হাতেম আলী তালুকদার এমপি ছিলেন, আমি বিএনপি’র সেক্রেটারি ছিলাম। তখন একই সাথে একই রাস্তায় পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র মিছিল গিয়েছে, কেউ কারো সাথে কোন দ্বন্দ্ব ছিল না বা ঢিল ছুঁড়া ছুঁড়ি ছিল না। গোপালপুর কলেজে ইলেকশন হয়েছে, কোন সময় ছাত্রলীগ জয়লাভ করেছে, কোন সময় আমাদের দল জয়লাভ করেছে, কোন টু শব্দ হয়নি। আমি যখন এমপি ছিলাম এবং পরে মন্ত্রী হলাম, আওয়ামী লীগের অনেক লোক আমার কাছে এসেছে, আমি তাদের কাজ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং কি করেও দিয়েছি। এই যে রাজনৈতিক সুসম্পর্ক ছিল, সেই সুসম্পর্কগুলোকে গত ১৭ বছরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা জানেন গোপালপুর সুতি বিএম হাই স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের একটি সভা হয়েছিল, আমি ওই স্কুলের ছাত্র ছিলাম, সেখানে আমাকে ফাঁসি চাওয়ার কথা শুনে ওই মিটিংয়ের প্রায় লোকগুলোই উঠে গিয়েছিল। কারণ তারা জানতো যে, আঃ সালাম পিন্টু কখনোই কোন অন্যায় কাজে যুক্ত ছিলেন না, তাই তারা কখনো মনে করেনি যে, আব্দুস সালাম পিন্টু ফাঁসির ঘটনার সাথে জড়িত এবং তার ফাঁসি হওয়া উচিত।
দু’একজন ছাড়া এটা কেউ মনে করে নাই, বলে আমি বিশ্বাস করি, সে আওয়ামী লীগ হোক কিংবা বিএনপি। বিগত দিনে যে জঞ্জাল বা কলঙ্ক ছিল, সেই কলঙ্কগুলো মুছে দিয়ে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে একে অপরের ভাই ও বন্ধু হিসেবে মিলেমিশে চলতে হবে, সেদিকে অগ্রসর হতে হবে।
আমাদের এই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। সেই সাথে আমার এই গোপালপুরকে কেউ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে জীবনে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছি। আমার জীবনে এরচেয়ে আর বেশি কিছু চাওয়া বা পাওয়ার নেই। প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা জানেন আমি বিগত ২০টি বছর টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি’র সেক্রেটারি ছিলাম। কত বছর আমি টাঙ্গাইলে ওকালতি করেছি, কিন্তু ঢাকা শহরে বা টাঙ্গাইল শহরে আমার কোন বাড়ি নেই। দীর্ঘদিন এমপি ছিলাম, মন্ত্রী ছিলাম, কিন্তু একটি প্লট বা কোন ফ্ল্যাট বাসা আমার নাই। আমি অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করেছি, শুধু দেশ ও জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করেছি। শুধু তাই নয়, আমি যে ওকালতি করেছি, সেখানে একটি লোকও বলতে পারবেন না যে আমি কারো কাছ থেকে পারিশ্রমিক চেয়ে নিয়েছি, কেউ দিলে নিয়েছি না, দিলে তাদের কাছ থেকে কখনো চাইনি।
রাজনীতি মানেই হল জনগণের সেবা দেওয়া, আমি সব সময় সেটাই করার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি একটি সংগঠন করার অর্থই হচ্ছে সেই সংগঠনের মাধ্যমে জনগণের সেবা করা। গোপালপুর উপজেলা সমিতি কি কারণে করা হয়েছে? আমরা করেছি যে গোপালপুরের মানুষ তথা ঢাকায় অবস্থিত যারা আছেন তাদের বিপদে-আপদে আমরা যেন তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। সেই কারণেই এই সংগঠনই করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।
সুতরাং আসুন আমরা সবাই যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বসবাস করি, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়াই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সবাই যদি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ, আমরা অবশ্যই আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারব। আমাদের দেশের অবস্থান করতে পারব, জাতির অবস্থান করতে পারব, সেই সাথে আমাদের এলাকারও অবস্থান পরিবর্তন করতে পারব।
পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন তার সহধর্মিণী সালাম বিলকিস তালুকদার। তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে খেলাধুলার পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে বনভোজন ও মিলনমেলার সমাপ্তি করা হয়।