
আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি:
সৌদি আরবে আগামী মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বৈঠকে দুই দেশের ভঙ্গুর সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পথ তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য, কিয়েভ জানিয়েছে, তারা রিয়াদে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় আমন্ত্রণ পায়নি। এর পাশাপাশি, মস্কোর প্রতি ওয়াশিংটনের আচরণে আকস্মিক পরিবর্তন দেখে হতবাক হয়েছে ইউরোপীয় নেতারা, যার ফলে তারা প্যারিসে এক জরুরি নিরাপত্তা সম্মেলন আয়োজন করেছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসবেন। এই বৈঠকের এজেন্ডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্ভাব্য এক শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বৈঠকের উদ্দেশ্য
ট্রাম্প তিন বছর ধরে চলমান এই সংঘাতের দ্রুত সমাধান চান, যেখানে মস্কো ইউরোপে ওয়াশিংটনের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগের বিরুদ্ধে ছাড় পাওয়ার সুযোগ দেখতে চাইছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভ ‘এই আলোচনার বিষয়ে কিছুই জানে না’ এবং ‘আমাদের ছাড়া আমাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বা চুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়’।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং পুতিনের জ্যেষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ এই বৈঠকে অংশ নেবেন, অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আলোচনা ‘প্রাথমিকভাবে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে’ এবং ‘ইউক্রেনসংক্রান্ত সম্ভাব্য সমঝোতা ও দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক আয়োজন’ নিয়ে হবে।
ইউক্রেনের অবস্থান
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি তুরস্ক সফরে যাবেন, যেখানে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে তিনি মার্কিন বা রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা করেননি।
রাশিয়ার কৌশল
মস্কো জানিয়েছে, ইউক্রেন আলোচনার ক্ষেত্রে তারা ইউরোপীয় দেশগুলোর উপস্থিতি প্রয়োজন মনে করে না। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “আমি জানি না তারা আলোচনার টেবিলে কী করবে… যদি তারা সেখানে বসতে চায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য, তাহলে তাদের আমন্ত্রণ জানাব কেন?”
ইউরোপীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় নেতারা এই আলোচনা সম্পর্কে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ থাকা মোটেই খারাপ নয়, যদি এটি একটি স্থায়ীত্ব ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় খোঁজার জন্য হয়।” তবে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্সি জানিয়েছে, ইউরোপীয় নেতারা প্যারিসে এক জরুরি বৈঠকে বসবেন ইউক্রেনের পরিস্থিতি এবং ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
রাশিয়ার সামরিক অগ্রগতি
রাশিয়া সাম্প্রতিক সামরিক সাফল্য নিয়ে আলোচনা টেবিলে বসতে যাচ্ছে। তারা এক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।
এছাড়া, কিয়েভ মার্কিন সামরিক সহায়তা হারানোর আশঙ্কার মুখোমুখি, যা নিয়ে ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা করে আসছেন।
ভবিষ্যৎ সমঝোতা
তবে এই আলোচনা যুদ্ধ বন্ধের কোনো চুক্তিতে পরিণত হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। কিয়েভ ও মস্কো—উভয়ই নিজেদের ভূখণ্ড থেকে কোনো ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেছে, এবং গত বছর পুতিন দাবি করেছিলেন, ইউক্রেনকে আরো বেশি এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
এখন, সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে আগামী বৈঠকটির দিকে, যেখানে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকরা একত্রিত হয়ে দুই দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানের জন্য আলোচনা করবেন।