
সৈয়দ জাহিদুজ্জামান:
লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের ওহিদ শেখ নামে এক প্রান্তিক কৃষক। তিনি এ বছর নিজের ১ বিঘা জমির সাথে অন্যের ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউ চাষ শুরু করেন। বাকি সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা, মূলা, শসা এবং পুঁই শাকের চাষ করেন।
ওহিদ শেখ বলেন, “আড়াই বিঘা জমিতে শসা লাগিয়েছিলাম, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হই। এরপর নিজের অল্প জমিতে দুই বছর অল্প অল্প করে হাইব্রিড জাতের লাউয়ের চাষ করি। ফলন খুব ভালো হয়। লাভবান হই। এরপর নিজের এক বিঘা জমির সাথে অন্যের দশ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে লাউয়ের চাষ শুরু করি। বাকি জমিতে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা, শসা, মূলা এবং পুঁইশাক লাগিয়েছি। আধুনিক বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের বীজ থেকে লাউ চাষে এ বছর প্রচুর লাভবান হয়েছি। আগে সাধারণত আমাদের বাড়ির পাশে মাচায় লাউ চাষ হতো, কিন্তু সেটার উৎপাদন খুব বেশি হতো না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের লাউ চাষে খরচ কম হয়, উৎপাদনও দ্বিগুণ হয়। এ বছর আমার বাম্পার ফলন হয়েছে। স্বাভাবিক ফলনের চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফলন পেয়েছি। লাউয়ের সাইজও খুব ভালো। লম্বা এবং গোলাকৃতি দুই জাতের লাউয়ের চাষ করেছি। এই লাউ খেতে খুব মিষ্টি। প্রতি ডগায় ডগায় লাউ ধরেছে। প্রতিটি ডগায় ছোট ছোট অসংখ্য লাউ ভর্তি। প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ লাউ কাটছি। বিক্রি করছি প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। দুই মাস আগে থেকে লাউ বিক্রি শুরু করি। তখন উৎপাদন কম ছিল। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০টা কাটতাম। তখন একটা লাউ বিক্রি করেছি ৭০-৮০ টাকা। এখন ক্ষেত থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ কাটছি। দিনে দুইবার লাউ কাটি। এখন দাম একটু কম, এক পিস ২০/২৫ টাকা বিক্রি করছি। বাঁশের চটার সঙ্গে দড়ি বেঁধে তার উপর নেট দিয়ে মাচান করে লাউ চাষ করছি। এ পদ্ধতিতে লাউ চাষে খরচ খুব কম। উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ এনে রোপণ করে বীজ অঙ্কুর হওয়ার পর থেকে যত্ন নেওয়া শুরু করি। এরপর গাছে ফুল আসলে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজনন না হলে কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন করাতে হয়। এক্ষেত্রে পুরুষ ফুলের পুংকেশর বা রেনু স্ত্রী ফুলের মাথায় স্পর্শ করে দিলে কৃত্রিম উপায়ে পরাগায়ন হয়। এর ফলে লাউ নষ্ট কম হয়। এটা করা না হলে পরাগায়নের অভাবে অনেক লাউ নষ্ট হয়ে যায়। ভোমরে লাউয়ের ক্ষতি না করতে পারে, সেজন্য ৫ লিটারের প্লাস্টিক বোতলের মাঝখানে কেটে বিষ মিশ্রিত পানি আঙিনায় মাঝে মাঝে বেঁধে রাখলে ভোমর পানির ভেতরে ডুবে মারা যায়।
ওহিদ শেখের প্রতিবেশী, দেয়াড়া গ্রামের গোলাম রহমান বলেন, “ওহিদ শেখ আমাদের দেয়াড়া গ্রামের একজন কর্মঠ চাষী। গত ২/৩ বছর ধরে সে আধুনিক বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের লাউয়ের চাষ করে সফল হয়েছে। বর্তমানে তার লাউ একটা বাম্পার প্রোডাকশনে আছে। প্রচুর ফলন হচ্ছে। লাউ বিক্রি করে খুবই লাভবান হচ্ছেন তিনি। ওহিদ শেখ এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী বাজারগুলোতেও তার লাউ সরবরাহ করছেন।”
দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ জানান, “এ উপজেলায় এবার লাউ চাষ হয়েছে ১২৭ হেক্টর জমিতে। যা প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ২০ টন। এখন সারাবছরই সবজির চাষ হয়। কৃষকরা জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত লাউ চাষ করছেন। বাজারে লাউয়ের চাহিদা থাকায় ও ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পেরে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। খরচ কম, উৎপাদন দ্বিগুণ। লাউ এবং অন্যান্য সবজি চাষে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
লাউয়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কৃষি অফিসার বলেন, “লাউয়ে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী লাউয়ে ক্যালসিয়াম ২৬ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৪ মিলিগ্রাম রয়েছে। এছাড়াও লাউয়ের অন্যান্য পুষ্টিগুণও রয়েছে, যেমন- খনিজ পদার্থ ০.৬ গ্রাম, আঁশ ০.৬ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি, আমিষ ১.১ গ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম, শর্করা ১৫.১ গ্রাম।”